ষাট-এর দশকে এদেশে তৎকালীন প্রাদেশিক রাজধানী ঢাকা ব্যতীত অন্যান্য জেলা শহরে মাত্র হাতে গোনা কয়েকটি স্থানে মহিলাদের জন্য পৃথক উচ্চ শিক্ষার সুযোগ ছিল। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভক্তির পরও তৎকালীন ফরিদপুর জেলাতে মহিলাদের জন্য পৃথক কোন উচ্চ শিক্ষার ব্যবস্থা ছিল না। এমনি পটভূমিতে ষাট-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে ফরিদপুর শহরের কিছু বিদ্যোৎসাহী ব্যক্তি মহিলাদের জন্য একটি পৃথক কলেজ প্রতিষ্ঠার চিন্তা-ভাবনা শুরু করেন।
ফরিদপুরের তৎকালীন ডেপুটি কমিশনার জনাব এম. কে. আনোয়ার এবং ফরিদপুর শহরের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, শিক্ষাবিদ ও সমাজসেবীদের সাথে কয়েক দফা আলাপ-আলোচনার পর একটি মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তাঁরা ফরিদপুর শহরের গোয়ালচামট এলাকার দানশীল ব্যক্তিত্ব শ্রী চন্দ্রকান্ত নাথ-এর শরণাপন্ন হয়ে তাঁকে এ ব্যাপারে সাহায্য-সহযোগিতা প্রদানের অনুরোধ জানান। তাঁদের অনুরোধক্রমে শ্রী চন্দ্রকান্ত নাথ ভাঙ্গা রাস্তার মোড়ে অবস্থিত তাঁর এক একর দশ শতাংশ জমির উপর পাঁচটি ছোট-বড় দালান ও আরও চারটি ঘর মহিলা কলেজের জন্য দান করতে সম্মত হন। এ বিরল দান শ্রী চন্দ্রকান্ত নাথ-কে মহিলা শিক্ষা প্রসারের ব্যাপারে ইতিহাসের পাতায় স্থান করে দিয়েছে। সর্বপ্রথমে বিনা খণ্ডকালীন অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন রাজেন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ মরহুম এ.কে.এম. হায়দার হোসেন। মিস্ মুশতারী বেগম পরবর্তীতে পূর্ণকালীন অধ্যক্ষ হিসেবে ১৯৬৮ সনের ফেব্রæয়ারি থেকে দায়িত্ব পালন করেন। মিস্ মুশতারী বেগম এ কলেজের প্রায় প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ১৯৭৬ সন পর্যন্ত অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে কলেজের বহু উত্থান-পতনের সঙ্গে নিজেকে বিজড়িত করেছেন। এ কলেজ তাঁর কাছে ঋণী।
১৯৬৬-৬৭ শিক্ষা বছরে ২৯ জন ছাত্রী নিয়ে একাদশ শ্রেণির মানবিক বিভাগের ক্লাস শুরু হয়। এ বছরই কলেজ ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের স্বীকৃতি লাভ করে। কলেজের অবস্থান শহরের পশ্চিমে জনবহুল এলাকায় প্রধান সড়ক তথা আন্তঃজেলা সড়কের একেবারে সন্নিকটে হওয়ায় শহরের প্রধান এলাকা হতে জরাজীর্ণ সংকীর্ণ আলিমুজ্জামান সেতুর উপর দিয়ে ছাত্রীদের যাতায়াতের অসুবিধার কথা বিবেচনা করে কলেজ কর্তৃপক্ষ ১৯৬৯ সনে গোয়ালাচামট হতে কলেজটিকে ঝিলটুলীতে স্থানান্তর করেন। ঝিলটুলীতে অবস্থিত (এ্যাডভোকেট নলিনী সেনের বাড়ী হিসেবে পরিচিত) সরকারের অর্পিত সম্পত্তির একটি বাড়ী ভাড়া নেয়া হয়। এগার কক্ষ বিশিষ্ট একটি একতলা দালানসহ প্রায় দু’একর পঞ্চাশ শতাংশ জমির উপর অবস্থিত সেই ভাড়া করা অর্পিত সম্পত্তিতেই বর্তমান কলেজের অবস্থান। গোয়ালচামটের শ্রী চন্দ্রকান্ত বাবুর প্রদানকৃত ভবনগুলি কলেজের হোস্টেলরূপে ব্যবহৃত হতে থাকে।
২০১৭ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারী তিনি অবসরে যান। ২০১৭ সালের ১৬ মার্চ কলেজের অধ্যক্ষ হিসাবে যোগদান করেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের স্বনামধন্য প্রফেসর মোহাম্মদ সুলতান মাহমুদ। তিনি ইতোমধ্যেই শিক্ষকবান্ধব, কর্মচারীবান্ধব এবং ছাত্রীবান্ধব অধ্যক্ষ হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেছেন এবং কলেজের ব্যাপক উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। বাংলা, ইতিহাস ও ইসলামের ইতিহাস এবং সংস্কৃতি বিভাগের মাষ্টার্স কোর্স চালুর প্রক্রিয়াধীন চলছে। বাংলা, ইতিহাস, ইস: ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের মস্টার্স কোর্স চালু প্রক্রিয়াধীন আছে। তার হাত ধরে কলেজটি অনেকদুর এগিয়ে যাবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। কলেজ প্রশাসন, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও ছাত্রীবৃন্দ বৃহত্তর ফরিদপুরের নারী শিক্ষা প্রসারে কলেজটির উন্নতি ও অগ্রগতির চেষ্টায় নিয়োজিত রয়েছেন।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস